Sutanuti Trail - Kolkata Heritage Walk Part 3
জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি
Sutanuti Trail-Kolkata Heritage Walk-Jorasanko Thakurbari-Gokul Mitra-Madan Mohon Mandir
জোড়াসাঁকো রাজবাড়ি থেকে বেরিয়ে হাঁটাপথে এবার ঢুকবো জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে।রাস্তা দিয়ে যেতে আসতে চোখে পরে প্রকান্ড সেই গেট।সেই গেট দিয়ে ঢুকে কিছুটা গেলেই এই মহর্ষি ভবন,যা বর্তমানে 'রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়'।
Want to experinece the the Metcalfe Hall Tour !! Click below - :
জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি :-
বাড়িতে ঢুকতেই যেন মনে ভেসে ওঠলো কত চেনা গান। এটাই যে তাঁর বাড়ি।তার জন্ম থেকে মৃত্যুর পর শেষ যাত্রা সবই এই বাড়িতেই। এই বাড়ির আসল প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের পিতা নীলমণি ঠাকুর।চিৎপুর রোডে(রবীন্দ্র সরণী) জমি পাবার পর নীলমণি ঠাকুর ছোট্ট একটা বাড়ি করেন। পরে দ্বারকানাথ ঠাকুর বর্তমান, আপনাদের পরিচিত অট্টালিকা তৈরি করেন ১৭৮৪ সালে সেই বাড়িকে ঘিরেই।
রথী মহারথীদের বাড়ি এটি।যুগ যুগ ধরে সংস্কৃতির ধারক ও বাহক, এ বাড়িতে জন্মেছেন বিশিষ্ট পুরুষ ও নারীরা। এ বাড়ির সব থেকে ভালো লাগার বিষয় হলো, এখানে ঘটেছে বারে বারে নারী স্বাধীনতা ও নারী প্রতিভার বিচ্ছুরণ।পর্দা প্রথার যুগেও নির্দ্বিধায় যোগ দিতেন তাঁরা নাটক,সাহিত্য, ব্যবসা ও সমাজ সংক্রান্ত বিষয়ে। আঁকতেন ছবি, লিখতেন মনের কথা,যেতেন গড়ের মাঠে হাওয়া খেতে।তাইতো,বাংলার রেনেসাঁসের অন্যতম পীঠস্থান এই বাড়ি। ৩৫,০০০ বর্গ মিটার জুড়ে বিস্তৃত এই লাল রঙের সুরম্য অট্টালিকা।
ঠাকুরদালান
বাড়ির প্রতিটি ইঁট আজও যেন কথা বলে।বাড়ির দোতলায় আছে মিউজিয়াম।বিশ্বকবির ঘরটি সুন্দর ভাবে রাখা আজও,ঘর লাগোয়া কবিপত্নী মৃণালিনী দেবীর রান্নাঘর,যা মনে করিয়ে দেয় কবির প্রিয় খাবারগুলো কথা ও মৃণালিনী দেবীর রন্ধনশৈলীর কথা। বাড়ির পিছনে রয়েছে কবির 'Humber Car',যেটা অনেকেই না দেখে বেরিয়ে আসেন হয়ত।
রবি ঠাকুর আমার প্রাণের ঠাকুর।তাই ঠাকুর দালানটা ভুলি কি করে।এককালে পরিবারের সদস্যরা মিলে অনুষ্ঠানে মেতে উঠতেন।এখন তারা নেই,তবে ঠাকুরদালান আজও মেতে ওঠে নানান অনুষ্ঠানে।আর একটা জিনিস না জানালে সম্পূর্ণ হবে না আপনাদের ঘোরা, সেটা হল এবাড়িতে সন্ধ্যে বেলা হয় ' লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো ' ,যা অভূতপূর্ব। ইংলিশ ও বাংলা দুটো ভাষাতেই হয় সারাবছরই,ছুটির দিনেও পাওয়া যায় এটা দেখা।
"পুরানো সেই দিনের কথা সেকি ভুলা যায়......"।
এবার যাবো অন্য একটি বাড়িতে, যে বাড়িটি চেনা হলেও ইতিহাস হয়তো অনেকের জানা নয়।
ছাতু বাবু - লাটু বাবুর বাজার, লেন এসব হয়ত আপনাদের জানা।কিন্তু এবাড়ির কৃতিত্ব কিন্তু এনাদের না,এনাদের বাবা রামদুলাল দে(দে সরকার) মহাশয়ের। তাই ওনার ইতিহাস না জানালে এই বাড়িকে জানানো সম্ভব নয় বলে আমি মনে করি।
রামমদুলাল দে কে ইন্দো-আমেরিকান ব্যবসার পথিকৃৎ বলা চলে।ইনি ছিলেন প্রথম আধুনিক বাঙালি ধনকুবের। সেসময় আমেরিকার ব্যবসায়ীরা এতটাই তার পুঁজি নির্ভর ছিলেন যে তার নামে একটি জাহাজের নামকরণ করা হয়েছিল 'Ramdulal De ' যেটা Boston(আমেরিকা) থেকে Kolkata এসেছে বহুবার।
এই রামদুলাল বাবু নিজের জীবন শুরু করেন অত্যন্ত দারিদ্রের সঙ্গে।জন্ম দিতে গিয়ে মা ও কিছুদিনের মধ্যেই বাবা মারা গেলে,দিদা দাদুর কাছে মানুষ হন।দিদা ছিলেন মদন মোহন বাড়ির ( হাট খোলার দত্ত বাড়ির) রাঁধুনি।সেই সূত্রে ওই বাড়ির ছেলেমেয়েদের সাথেই গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ার পাঠ শেষ করে গৃহকর্তার আনুকূল্যে অফিসের ৫ টাকা মাইনে কেরানি হয়ে যোগ দেন।খুব শিগগিরই সেটা বেড়ে মাসিক ১০ টাকা হয়।সেই সময় একটি জাহাজের নিলামে ১ লক্ষ টাকা দিয়ে একটি জাহাজ নিলাম করেন রামদুলাল দে।সুযোগ ছিল মালিককে ঠকানোর কিন্তু সৎ এই কর্মচারী মালিকের হাতে তুলে দেন পুরো লক্ষ টাকা।খুশি হয়ে মদন মোহন দত্ত তাকে পুরস্কার দেন এই টাকাই ও বলেন, নিজের ব্যবসা শুরু করতে।সেই এক লক্ষ টাকা ছিল তার ধনকুবের হবার প্রথম পুঁজি।আর ফিরে তাকাতে হয়নি কোনোদিন ও তাকে।তৈরি করেন ' রামদুলাল নিবাস '।
দুশতক আগে ছেলেদের জন্য রেখে গেছিলেন ১২৩,০০,০০০ টাকা,যা অকল্পনীয়।১৭৭০ সালে দুর্গাপূজা শুরু করেন।যদিও তার দুই দত্তক পুত্র ছাতু বাবু(আশুতোষ),লাটু বাবু(প্রমথ নাথ) তৎকালীন বাবু সম্প্রদায়ে জীবন কাটাতে থাকেন।ছাতু বাবুর ছিল গানবাজনার সখ।তাই নাচঘর থাকতো সবসময় জমজমাট।এসেছিলেন বিখ্যাত নর্তকী গহরজান থেকে পণ্ডিত রবি শঙ্কর। লাল ইটের তৈরি এই প্রাসাদ আজও বজায় রেখেছে বনেদী দুর্গাপুজোর ঐতিহ্য।
ঘুরে বেড়ানো যায় বাড়ির প্রায় সর্বত্রই।ঘুরে দেখে এবার বেরোবার পালা। যাবো আর এক বাড়িতে যার ঐতিহ্য বাড়ির থেকেও মন্দির প্রতিষ্ঠায়।
গোকুল মিত্রর বাড়ি ও মদন মোহন মন্দির :-
গোকুল মিত্র ছিলেন চাঁদনী চক বাজারের মালিক।তিনি ছিলেন নুনের ব্যবসায়ী। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসা করে করেন প্রচুর প্রতিপত্তি।৫৬ বিঘা (২২.৫ একর ) জমির ওপর তৈরি করেন বসত বাড়ি।বাড়িতে আছে মদন মোহন মন্দির,ঠাকুরদালান।১৭৬১ সালে, হিন্দু ও ইউরোপীয়ান স্টাইলের মিশ্রনে তৈরি করেন এই মন্দির।
অতীতের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, বাগবাজারের মদন মোহন মন্দিরের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত বিষ্ণুপুরের মদন মোহন মন্দির।১৬৯৪ সালে,মল্লরাজ দুর্জন সিংহ বিষ্ণুপুরে তৈরি করেন মদন মোহন মন্দির।
পরবর্তীকালে চৈতন্য সিংহের রাজত্বকালে তার উদাসীনতার সুযোগ নিয়ে ভাই দামোদর সিংহ সিরাজ-উদ-দৌল্লার থেকে সৈন্য ভাড়া করে বিষ্ণুপুর আক্রমণ করেন।কিন্তু প্রথমবার ব্যর্থ হলে পরে মীর-জাফরের থেকে সৈন্য ভাড়া করে বিষ্ণুপুর আক্রমণ ও দখল করে। চৈতন্য সিংহ পালিয়ে আসেন কলকাতা,কেবল সঙ্গে আনেন মদন মোহনজিকে।ব্রিটিশ সরকারের কাছে চান ন্যায়বিচার।ইংরেজ সরকার কেস করতে বলেন,যাতে লাগল অনেক টাকা।সেই টাকা ধার দেন গোকুল মিত্র।বিনিময় জমা রাখেন মদন মোহনের মূর্তি।কথিত আছে, কোনোদিনই সেই মূর্তি তিনি ফেরত নিতে পারেন নি।সেই থেকে বিষ্ণুপুরের মদন মোহন এলেন বাগবাজার। রাধিকার মূর্তি নির্মাণ করে মূর্তিজুগল স্থান পেল মন্দিরে।
মার্বেলের সিঁড়ি দিয়ে পৌঁছাতে হয় এই মন্দিরে।প্রকান্ড সে ঘর।বাড়ির পাশে আছে রাস মঞ্চ।বিশেষ তিথিতে প্রভু আসেন এখানে। প্রতি বছর কালীপুজোর পরের দিন হয় অন্নকূট উৎসব ধুমধাম করে।আজও প্রচুর লোক ওই দিনে পুরোনো বিশ্বাসে বিষ্ণুপুর থেকে আসেন আসল মদন মোহন এর দর্শনে।
কথায় বলে, সব ভালো যার শেষ ভালো।প্রভুর দর্শন দিয়েই শেষ করলাম সুতানুটি পরিক্রমা।ফিরে গেলাম বাসে করে বিবাদী বাগের অফিসে,যেখান থেকে শুরু করেছিলাম যাত্রা।
সুতানুটি পরিক্রমা শেষ হলেও আমাদের পরিক্রমা কিন্তু চলতে থাকবে এভাবেই।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
If you have any query, please let me know.